সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

দেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মেগা প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু, অবশেষে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু করেছে। যমুনা নদীর ওপর নির্মিত এই সেতু উত্তরাঞ্চলবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। তবে, সেতুটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হতে আরও অন্তত দুই মাস সময় লাগবে, জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সকালে, বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর মাধ্যমে প্রথম ট্রায়াল ট্রেনটি ভুয়াপুরের পূর্বপাড় থেকে সিরাজগঞ্জের পশ্চিমপাড়ে পৌঁছায়। সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে এই ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে এবং ১০টা ৪১ মিনিটে ফিরে আসে। প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেনে একটি ইঞ্জিন এবং তিনটি বগি ছিল। শুরুতে ট্রেনটি ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে চললেও পরবর্তীতে ৪০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় গতি বাড়ানো হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরবর্তী পর্যায়ে ট্রেনের গতি আরও বাড়ানো হবে এবং ট্রায়াল চলতে থাকবে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের পরিচালক আল-ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে জানান, সেতুর ওপর দিয়ে দুইটি ট্রায়াল ট্রেন চলাচল করছে এবং ধীরে ধীরে এর গতি বাড়ানো হবে। প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ নাইমুল আরও জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রেনের পূর্ণগতি পেতে আরও দুই মাস সময় প্রয়োজন।প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপন হয়। কিন্তু ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ার পর ট্রেনের গতিসীমা কমিয়ে ২০ কিলোমিটার করা হয়, যার ফলে যাত্রীদের মধ্যে ভোগান্তি এবং শিডিউল বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাগুলোর সমাধান এবং রেল যোগাযোগ উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।২০২০ সালের আগস্টে *বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু* প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ৯,৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬,৭৮০ কোটি টাকায়। প্রকল্পের জন্য ১২,১৪৯ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্পের নির্ধারিত সময়সীমা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে হলেও, পরবর্তীতে তা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে স্থানান্তর করা হয়।বঙ্গবন্ধু রেল সেতু চালু হলে উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকার রেল যোগাযোগে গতি বাড়বে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।