
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীতে একজন মায়ের অপূর্ণ স্বপ্ন, একজন ছেলের অদম্য সংগ্রাম, আর একটি পরিবারের সম্মিলিত আত্মত্যাগ এই বাস্তব গল্পটি আবুল হাসান রাজুর যার জীবন কেবল একটি চাকরি পাওয়ার কাহিনি নয়, বরং একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের অবিনাশী উদাহরণ।
স্বপ্নের শুরু সেই গ্রাম থেকে
আবুল হাসান রাজু’র জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঝিনাইগাতী উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বনগাঁও পূর্ব পাড়া গ্রামে।
২০০৮ সালে বনগ্রাম হাফেজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ- ৫ এবং ২০১০ সালে শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ অর্জনের মাধ্যমে শুরু হয় তার শিক্ষাজীবনের উজ্জ্বল পথচলা।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও পরিবারের সিদ্ধান্তে তিনি ভর্তি হন রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে । ওখান থেকেই তিনি অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
আবুল হাসান রাজু ছোট থেকেই অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছাত্রাবস্থায় জড়িত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে, তিনি ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের সিনিয়র রোভার মেট।
তার মাতা রেহেনা বেগম এক বিসর্জিত স্বপ্নের নাম আবুল হাসান রাজু’র জীবনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার মা রেহেনা বেগম।
আশির দশকে এসএসসি (ম্যাট্রিক) পাশ করা মহীয়সী এই নারী নিজের শিক্ষা ও ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে আট সন্তানকে গড়ে তোলেন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে।
আজ তার প্রতিটি সন্তান গ্রাজুয়েট, কর্মস্থলে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে সফল, আর এই দৃশ্য তার স্বপ্নের পূর্ণতা।
"মা সবসময় বলতেন—তুই বিসিএস ক্যাডার হবি। মা বেঁচে নেই, কিন্তু তার স্বপ্ন আজ আমি পূরণ করেছি,মা বেচে থাকা অবস্থাতেই দেখে গিয়েছেন তার ছেলে তার স্বপ্ন ছুয়েছে আবেগ জড়ানো কণ্ঠে।
সংগ্রাম থেকে সাফল্য বিসিএস যাত্রা তিনি অনার্স চলাকালীন ৩য় বর্ষ পরীক্ষা শেষ করে চাকরির প্রিপারেশন শুরু করেন।পরবর্তীতে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স চলাকালীন সময়েই সাফল্যের দেখা পায় এবং ২০১৭ সালে পূবালী ব্যাংকে জয়েন করে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর কাজ করেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে। চাকরিরত অবস্থায় অংশ নেন ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।
অবশেষে ২০২১ সালে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে বিসিএসের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছান এবং দেওয়ানগঞ্জ,জামালপুর এ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন।
বর্তমানে তিনি উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং, খামারবাড়ি, ঢাকা-তে রসায়নবিদ পদে কর্মরত।
একটা পরিবারের সম্মিলিত জয়
আবুল হাসান রাজু জানান, তার এই অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন তার বড় বোন মৃত নূর জাহান পারভীন যিনি ছিলেন একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক।
তার মাতৃতুল্য বোন হচ্ছেন তার আইডল।২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি ।বর্তমানে তিনি এক পুত্র ও কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী, যিনি বিয়ের পর প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন।
“আমার আমার বড় বোনের শিক্ষা, স্ত্রী এবং পুরো পরিবারের দোয়া-ভালোবাসা ছাড়া এ পথ পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো না।
আবুল হাসান রাজু আরও বলেন স্বপ্ন এখন অন্যদের জন্য নিজের স্বপ্নপূরণেই থেমে থাকেননি তিনি। তিনি এখন চান, তার মতো গ্রামের মেধাবী কিন্তু সুযোগবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতে।
“আমি চাই, আমার মতো অন্যরাও তাদের স্বপ্নকে ছুঁতে পারুক। তাদের জন্যই এখন কাজ করতে চাই।"
ত্যাগ, সংকল্প আর ভালোবাসা থাকলে অসম্ভবও সম্ভব হয়। একজন মায়ের অপূর্ণ স্বপ্ন, এক ছেলের অদম্য লড়াই, এবং একটি পরিবারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা—এই গল্প প্রমাণ করে, স্বপ্ন পূরণ হয় তখনই, যখন তা সবার হয়ে ওঠে।
আবুল হাসান রাজু নামটি আজ শুধু একজন বিসিএস ক্যাডারের পরিচয় নয়—এটা একটি পরিবারের সম্মিলিত স্বপ্ন, একটি মায়ের আত্মত্যাগ ও একজন ছেলের অদম্য সাহসের জ্বলন্ত উদাহরণ।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ ফরিদ হোসেন বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩