
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার
আওয়ামীলীগের দূষর রুকন উদ্দিন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শাহরুখ আলম শান্তনু র সাথে দূব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। তাকে সুবিধা না দিলেই তার নিজের ফেইসবুকে যাচ্ছে তাই লিখে ব্ল্যাক মেইল করে বলে উপজেলা জুড়ে নানান শ্রেণি পেশার মানুষের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও আ,লীগের দূষর হলেও তাকে পুলিশ আটক করেছে না।
৫ আগষ্টের পর থেকে বিএনপি নেতাদের আতাত করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সে। কখনো ইউএনও আবার কখনও সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কে নিয়ে নানান তোষামোদি মন্তব্য তার নিজের ফেইসবুক আইডিতে লিকে সুবিধা আদায়ে সব সময় ব্যস্থ থাকে। তার এমন কার্যক্রমে সর্বস্তরের জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান সচেতন মহল। রুকন উদ্দিন এর আপন বড় ভাই উপজেলা আ,লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, তার বাতিজা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে নীতিমালা অমান্য করে জেলার স্পর্শকাতর টাঙ্গুয়ার হাওরের নিকটবর্তী চারটি জলমহালের খাস কালেকশন দেওয়া হয়েছিল গেল বছর (২০২৪ ইংরেজি, ১৪৩২ বাংলা সনে)। এই মহালগুলো থেকে আদায়কৃত খাস কালেকশনের টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হয়েছে কী-না এই তথ্যও নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে।
সম্প্রতি তাহিরপুরের এসিল্যান্ড (উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি) এই খাস কালেকশন চুক্তি বাতিল করায় দখলদার পক্ষ এবং এসিল্যান্ডের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে।
বুধবার বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দায়িত্বশীলদের হোয়াটস অ্যাপে লিখে জানিয়েছেন এসিল্যান্ড।
আরও জানা যায়, তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশর্^বর্তী চাপটান হাওরের ভাঙার খাল, বলদা গ্রুপ জলমহালের একটি অংশ, পানিয়ার ডোবা জলাশয়, দাঁতভাঙা জলমহাল নিয়ম বহির্ভূতভাবে খাস কালেকশন দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম।
দাঁতভাঙা জলমহালের পাশের গ্রাম লতিফপুরের তফুর আলম, চাপটান হাওর ভাঙার খাল ধরুন্দ বাদাঘাটের নাজির হোসেন, বলদা গ্রুপ জলমহাল টাকাটুকিয়ার মকলিছ মিয়া এবং পানিয়ার ডোবা জলমহালটি জয়নগরের আরিফ আহমদকে খাস কালেকশনের জন্য দেওয়া হয়। স্পর্শকাতর এলাকার এই জলমহালগুলোর খাস কালেকশন সম্প্রতি উর্ধ্বনদের নির্দেশে বাতিল করেন এসিল্যান্ড।
এসিল্যান্ডের খাস কালেকশন বাতিলের এই চিঠি গ্রহিতারা রিসিভ না করে উল্টো হুমকি-ধমকি ও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে উর্ধ্বতনদের জানিয়েছেন এসিল্যান্ড।
জেলা প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা জানান, তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রোকন উদ্দিন মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটায় এসিল্যান্ডের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে হেয় করে পোস্ট দেওয়া হয়।
তাহিরপুর উপজেলার ডিহিবাটী ও সদর তহশিল অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আশীষ চক্রবর্তী ও রুহুল আমীন জানালেন, চারটি জলমহালই নিয়মনীতি ভঙ্গ করে খাসকালেকশনের জন্য দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতনদের লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। এগুলো থেকে কোন রাজস্ব আদায় হয়েছে কী-না এটাও তারা জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানান।
একজন তহশিলদার বললেন, একবার কিছু টাকা ওই খাস কালেকশন গ্রহিতারা আমাদেরকে রাজস্ব খাতে জমা দেবার জন্য বলেছিল, আমরা বলেছি নিয়মনীতি ছাড়া এসব টাকা নিতে পারবো না।
তাহিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রোকন উদ্দিন নিজেকে জৈন্তা বার্তার তাহিরপুর প্রতিনিধি উল্লেখ করে বললেন, দাঁতভাঙা জলমহালটি জুলাই আন্দোলনের একজন ছাত্রনেতা গ্রামের আরেকজনকে (খাস কালেকশন আদায়কারী হিসেবে) নিয়ে দিয়েছিলেন। এটা কেন বাতিল হলো এসিল্যান্ড সাহেবকে জিজ্ঞেস করার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তার অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি অফিস সময়ে আসার কথা বলেছেন। এর বেশি তার সঙ্গে কোন কথা হয় নি। ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস এসিল্যান্ডকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয় নি বলে জানান রোকন উদ্দিন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান মানিক বললেন, রোকন উদ্দিনের সঙ্গে এসিল্যান্ডের কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। এটা কী সমাধান হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।
প্রসঙ্গত. টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি জলাভূমি এবং দেশের অন্যতম সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। টাঙ্গুয়ার হাওর রামসার সাইট হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি উভয় হাওরই ১৯ এপ্রিল, ১৯৯৯ তারিখের প্রজ্ঞাপনে প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। জলচর পাখি, মৎস্য ও জলজ উদ্ভিদের আবাসস্থল হিসেবে এ হাওর দুটি জীববৈচিত্র্য, জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বর্জ্য নিঃসরণসহ অন্যান্য কারণে এ দুইটি হাওরের প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। এ প্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩-এর ধারা ২২ ও ২৭ এর ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের জন্য “টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ” জারি করা হয়। এ সুরক্ষা আদেশের উদ্দেশ্য হলো টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় বিধিবিধান প্রতিপালন নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলা যা হাওর দুটির অনন্য বৈশিষ্ট্য, নৈসর্গিক আবেদন ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষা করবে।
এছাড়াও প্রজ্ঞাপনে জেলা প্রশাসক কে সভাপতি করে হাওর সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। এই কমিটি সুরক্ষা আদেশের প্রচার, বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ এবং সুরক্ষা আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের সাথে সমন্বয় করে হাওরের প্রতিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ কৃষি ও মৎস্য কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উপযুক্ত বিকল্পের ব্যবস্থা করবে। হাওর দুটিতে বিদ্যমান জলজ বন সুরক্ষা করা, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার অধীনে নতুন জলজ বন গড়ে তোলা এবং সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও কমিটি এ সুরক্ষা আদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘উপজেলা সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ ও ‘ইউনিয়ন সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি’ সমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।
সুরক্ষা আদেশ কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষলে উল্লেখ করা হয়েছে- হাওরে বিদ্যমান জলজ বন সুরক্ষা করা, সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার অধীনে নতুন জলজ বন গড়ে তোলা এবং সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুরক্ষা আদেশ প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক এবং সুরক্ষা আদেশ লঙ্ঘন বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
প্রকাশক ও সম্পাদকঃ সোহেল সরকার কর্তৃক লন্ডন যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত
সহ সম্পাদকঃ মোঃ ফরিদ হোসেন বার্তা বিভাগঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
সাথী সোহেল জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন (আর্তমানবতার সেবায়) বিকাশঃ ০১৩০২৪৪৭৩৭৩