সিরাজগঞ্জের চলন বিলাঞ্চলে চলতি বছরের ভরা মৌসুমে পিয়াজ ও রসুন চাষাবাদে বীজের দাম বেশি হওয়ায় চাষাবাদে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। তারা বলছেন, এক বিঘা রসুন চাষে ৩০ এবং পিয়াজে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। মৌসুমে রসুন-পিয়াজের আবাদে বীজের চড়া দামের কারণে উৎপাদন খরচে কৃষকের মাথায় বোঝার উপর শাকের আঁটির মতো অবস্থা। শনিবার তাড়াশ উপজেলার নাদোসৈয়দপুর, সগুনা ইউনিয়নের কাটাবাড়ী ও হেমনগর গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বিঘা জমিতে রসুন আবাদে ৩ মণ ভালোমানের বীজ লাগে।
এর দাম চলতি বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। অথচ গত বছর ২২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এবার শুধু বীজের খরচ বাড়ছে বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। অপরদিকে, এক বিঘা জমিতে পিয়াজের আবাদের জন্য ৮ মণ ভালো মানের বীজ প্রয়োজন হয়। এর দাম চলতি বছর ৫৫ হাজার টাকা। গত বছর ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেই হিসাবে এবার বীজ বাবদ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা বেশি লাগছে। ভরা মৌসুমে এ দুই ফসলের বীজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে ৭৫০ হেক্টর জমিতে রসুন ও ১৫০ হেক্টর জমিতে পিয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষিরা জানান, চলন বিল অধ্যুষিত এলাকায় বিনা চাষে রসুন এবং পিয়াজের বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হয়। তবে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ বাজার থেকে কেনা। পিয়াজ-রসুন ওঠার পর কৃষক কিছু অংশ বাছাই করে বীজ হিসেবে রাখেন। এগুলো আট থেকে ৯ মাস বাড়িতে সংরক্ষণ করেন। সেগুলোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার মসলা জাতীয় ফসলের আবাদে বিপ্লব ঘটে। এতে আবাদের ধারাবাহিকতাও রয়েছে। তবে মৌসুমে বীজের চড়া দাম কৃষকদের ভোগাচ্ছেন।
আরেক চাষি নাদোসৈয়দপুর গ্রামের কৃষক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, শুধু বীজে যদি এত টাকা লাগে, তাহলে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, ওষুধ, সেচ, কৃষি শ্রমিকসহ অন্য খরচ জোগানো অনেকের সাধ্যের বাইরে চলে যায়।
নওগাঁ হাটে রসুন বীজ বিক্রেতা শুক্কুর আলী বলেন, এ বছর পিয়াজ-রসুনের দাম বেশি। সব সময়ই খাবারযোগ্য পিয়াজ-রসুনের চেয়ে বীজের দাম বেশি থাকে। আগামী ১৫ দিন থেকে এক মাসের মধ্যে পুরোদমে এ দুই ফসলের আবাদ শুরু হবে। তখন দাম আরও বাড়তে পারে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে বাজারে পিয়াজ-রসুনের বীজের দাম বেশি। তবে এ আবাদে ভালো ফলন হলে কৃষক পুষিয়ে নিতে পারবে। তিনি বলেন, বীজসহ সব ধরনের পণ্যের দাম ঠিক রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার তদারকি করা হচ্ছে। কেউ যদি যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি নেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।