আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী “ইয়া” يا শব্দ নিকটে ও দূরে সর্বক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যায়ঃ
“হেদায়াতুন নাহু” গ্রন্থকার আল্লামা সিরাজুদ্দীন উসমান রহঃ বলেন-
أي والهمزة للقريب وايا وهيا للبعيد ويا لهما وللمتوسط،
অর্থঃ أي এবং همزة নিকটবর্তীর জন্য এবং ايا ও هيا দূরবর্তীর জন্য আর “ইয়া” يا নিকটবর্তী, দূরবর্তী ও মধ্যবর্তী সকলের জন্য৷
“কাফিয়া” গ্রন্থকার আল্লামা ইবনে হাজিব রহঃ বলেন-
يا اعمها و ايا و هيا للبعيد و أي و همزة للقريب،
অর্থঃ “ইয়া” يا আম বা ব্যাপক অর্থাৎ নিকটবর্তী, দুরবর্তী ও মধ্যবর্তী সকলের জন্য, ايا এবং هيا দূরবর্তীর জন্য, أي এবং همزة নিকটবর্তীর জন্য৷
•
মদীনার সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন রাস্তায় মিছিল করে “ইয়া মুহাম্মাদু ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে স্লোগান দেনঃ
(ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) : ﻗﺪﻣﻨﺎ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻟﻴﻼ ﻓﺘﻨﺎﺯﻋﻮﺍ ﺍﻳﻬﻢ ﻳﻨﺰﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻧﺰﻝ ﻋﻠﻲ ﺑﻨﻲ ﺍﻟﻨﺠﺎﺭ ﺍخوال ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﺍﻛﺮﻣﻬﻢ ﺑﺬﺍﻟﻚ ـ ﻓﺼﻌﺪ ﺍﻟﺮﺟﺎﻝ ﻭﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻓﻮﻕ ﺍﻟﺒﻴﻮﺕ ﻭﺗﻔﺮﻕ ﺍﻟﻐﻠﻤﺎﻥ ﻭﺍﻟﺨﺪﻡ ﻓﻲ ﺍﻟﻄﺮﻳﻖ، ﻳﻨﺎﺩﻭﻥ : ” ﻳﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ” ـ
* [ ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﻤﺴﻠﻢ ﺍﻟﺸﺮﻳﻒ، ﺟﻠﺪ ـ ﺛﺎﻧﻲ، ﺻﻒ ـ 419 ـ (ﺑﺎﺏ ﻫﺠﺮﺓ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ) ،
অর্থাৎ (হযরত আবুবকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন) “আমরা রাত্রি বেলায় মদীনায় পৌছলাম, তখন মদীনার লোকজন প্রতিযোগীতা শুরু করলেন যে, প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কার ঘরে অবস্থান করবেন৷
সুতরাং তিনি আব্দুল মোত্তালিব রাঃ এর মামার গোত্র বনী নাজ্জার গোত্রে অবস্থান করে এর মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানীত করেন৷
“অতপর সমস্ত পুরুষ এবং নারীগণ ঘরের ছাদের উপর আরোহন করলেন , ছোট কোমল বাচ্চারা এবং খাদেমরা বিভিন্ন রাস্তায় বের হয়ে গেলেন ৷৷
উনারা (রিসালাতের স্লোগানে) ডাকতে লাগলেনঃ
“ইয়া মুহাম্মাদু ইয়া রাসূলাল্লাহ”
সূত্রঃ
সহীহ মুসলিম শরীফ, বাবু হিজরাতুল মদীনা, খন্ড-2, পৃষ্ঠা-419,
•
“ইয়ামামার যুদ্ধে” ভন্ড নবী মোসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরোদ্ধে সাহাবায়ে কিরামের স্লোগান ছিল “ইয়া মুহাম্মাদাহ্”
قال خالد: انا ابن الوليد العود انا ابن عامر وزيد! ونادي بشعارهم يومئذ، وكان شعارهم يومئذ يا محمداه،
অর্থঃ হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাঃ বলেন- আমি ওয়ালিদ আল উদ এর সন্তান, আমি আমের ও যায়েদ এর সন্তান ৷ বর্ণনাকারী বলেন: তিনি ঐ দিন মুসলমানদের প্রতীক দ্বারা আহবান করলেন৷ আর ঐদিন মুসলমানদের প্রতীক ছিল “ইয়া মুহাম্মাদাহ্”৷
সূত্রঃ
1• তারীখে তাবারী, আল্লামা আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী, (224-310 হিজরী), খন্ড-3, পৃষ্ঠা-293,
2• আল কামিল ফিত তারীখ, ইমাম ইবনুল আছীর, ওফাত-630 হিজরী, খন্ড-2, পৃষ্ঠা-221,
3• আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর, (701-774 হিজরী), খন্ড-6, পৃষ্ঠা-312,
•
“ইয়ারমুকের যুদ্ধে” অভিযানের সময় সাহাবায়ে কেরাম “ইয়া মুহাম্মাদু” বলে স্লোগান দেনঃ
قال عبد الرحمن وكان خالد امامنا في حملته ونحن من ورائه وكان شعارنا: يا محمد يا منصور امتك امتك، فلم يزل خالد في حملته ونحن من ورائه حتي وصل الي الديرجان،
অর্থঃ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে হুমাইদ রাঃ বলেন- হযরত খালিদ ইবনে ওলীদ রাঃ তার বাহনে এবং আমরা তার পিছনে পিছনে ছিলাম৷ আর আমাদের প্রতীক ছিল “ইয়া মুহাম্মাদু ইয়া মানছুরু উম্মাতিকা উম্মাতিকা”৷ সুতরাং সর্বদাই খালিদ ইবনে ওলীদ রাঃ তার বাহনে থেকে এবং আমরা তার পিছনে পিছনে থেকে বলতে থাকলাম, এমনকি তিনি দিরজানে এসে পৌছলেন৷
সূত্রঃ
ফুতুহুশ শাম, ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ওয়াকেদী, ওফাত-207 হিজরী, খন্ড-1, পৃষ্ঠা-197,
•
“কারবালার যুদ্ধে” জয়নব বিনতে ফাতেমা রাঃ “ইয়া মুহাম্মাদাহ্, ইয়া মুহাম্মাদাহ্” বলে শোকগাঁথা পেশ করেনঃ
عن قرة بن قيس التميمي قال نظرت إلى تلك النسوة لما مررن بحسين وأهله وولده صحن ولطمن وجوههن قال فاعترضتهن على فرس فما رأيت منظرا من نسوة قط كان أحسن من منظر رأيته منهم ذلك اليوم والله لهن أحسن من مهايبرين قال فما نسيت من الأشياء لا أنس قول زينب ابنة فاطمة حين مرت بأخيها الحسين صريعا وهي تقول يا محمداه يا محمداه صلى عليك ملائكة السماء هذا الحسين بالعراء مرمل بالدماء مقطع الأعضاء يا محمداه وبناتك سبايا وذريتك مقتلة تسفي عليها الصبا قال فأبكت والله كل عدو وصديق،
অর্থঃ হযরত ক্বরাহ ইবনে ক্বয়েছ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি ঐ সকল পর্দানশীল রমনীদেরকে দেখলাম, যখন তারা ইমাম হোসাইন রাঃ এবং তার পরিবার পরিজন ও ছেলে সন্তানদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন৷ বর্ণনাকারী বলেন- তারা ঘোড়ার উপর সওয়ার হয়ে সামনে অগ্রসর হলেন, সুতরাং এই রমনীদের চেয়ে সুন্দর রমনী আমি কখনও দেখিনি৷ ঐদিন তাদের মধ্যে একজনকে দেখলাম যিনি দেখতে অধিক সুন্দরী ছিলেন৷ আল্লাহর শপথ! তারা গমনকারীদের মধ্যে অধিক সুন্দরী ছিলেন৷ বর্ণনাকারী বলেন- আমি কোন কিছুই ভুলিনি, ফাতেমা রাঃ এর কণ্যা জয়নব রাঃ এর কথা আমি ভুলতে পারবনা৷ যখন তিনি তার ভাই ইমাম হোসাইন রাঃ এর প্বার্শ দিয়ে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন তিনি বলছিলেন: “ইয়া মুহাম্মাদাহ্ ইয়া মুহাম্মাদাহ্”! আপনার উপর আকাশের ফেরেশতারা দুরুদ শরীফ পড়েন, এই যে,ইমাম হোসাইন রাঃ বিবস্ত্র, রক্তে ধুলিবালি মিশ্রিত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিখন্ডিত৷ “ইয়া মুহাম্মাদাহ্! আপনার মেয়েরা আজ বন্দী, আপনার সন্তানেরা শহীদ, লাশের উপর পূবালী হাওয়া বালি বর্ষণ করছে ৷ বর্ণনাকারী বলেন- আল্লাহর শপথ! তিনি ক্রন্দন করলেন যাতে প্রত্যেক শত্রু ও মিত্র সকলকে কাঁদালেন৷
সূত্রঃ
1• তারীখে তাবারী, আল্লামা আবু জা’ফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী, (224-310 হিজরী), খন্ড-3, পৃষ্ঠা-336,
2• আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইবনে কাছীর, (701-774 হিজরী), খন্ড-8, পৃষ্ঠা-187,
•
হযরত আবিদুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ এর পা অবস হয়ে গেলে তিনি “ইয়া মুহাম্মদ” বলেনঃ
عن عبد الرحمن بن سعد رضي الله قال: خدرت رجل ابن عمر فقال له رجل: اذكر احب الناس اليك، فقال: يا محمد،
অর্থঃ হযরত আব্দুর রহমান ইবনে সা’দ রাঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ এর পা অবস (প্যারালাইজড) হয়ে গেলে একজন ব্যক্তি তাকে বললেন: আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে স্মরণ করুন৷ অতঃপর তিনি বললেন: “ইয়া মুহাম্মাদু”৷
সূত্রঃ
1• আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী রহঃ, হাদিস নং-964, খন্ড-1, পৃষ্ঠা-335,
2• হিলইয়াতুল আউলিয়া, আবু নুয়াঈম ইস্পাহানী, খন্ড-9, পৃষ্ঠা-117,
3• তারীখে মাদীনাতুদ দামেশক, ইবনে আসাকির, খন্ড-31, পৃষ্ঠা-177,
4• তাবাকাতুল কুবরা, মুহাম্মদ ইবনে সা’দ, খন্ড-4, পৃষ্ঠা-154,
5• আল ইলাল, দারে কুতনী, খন্ড-13, পৃষ্ঠা-242,
6• আল মুসনাদ, ইবনে জুয়াদ, খন্ড-1, পৃষ্ঠা-369,
7• আ’মালুল ইয়াউমা ওয়াল লাইলা, ইবনে সুন্নী, খন্ড-1, পৃষ্ঠা-141,
8• তাহযীবুল কুম্মাল, আল মুযী, খন্ড-17, পৃষ্ঠা-142,
9• আল কালিমাতুত তাইয়্যিব, (আহলে হাদিসদের মান্যবর) ইবনে তাইমিয়া, (661-728 হিজরী), হাদিস নং-234, পৃষ্ঠা-88,
•
নবী বংশের একমাত্র নক্ষত্র ইমাম আলী বিন হোসাইন বিন আলী রাঃ (ইমাম জয়নুল আবেদীন) কুখ্যাত এজিদের বন্দীশালা থেকে নবীজিকে “ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন” বলে আহবান করেনঃ
يا رحمة للعلمين * ادرك لزين العابدين،
محبوس ايدي الظالمين * في الموكب والمزدحم،
অর্থঃ “হে রাহমাতুল্লিল আলামীন! জয়নুল আবেদীনকে উদ্ধার করুন,
জালেমদের হাতে বন্দী কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্যে রয়েছি৷
সূত্রঃ
“কাছীদায়ে ইমাম জয়নুল আবেদীন” ইমাম আলী বিন হোসাইন বিন আলী, ওফাত-94 হিজরী,
•
কিয়ামতের দিন “হতভাগা উম্মতের দল” বিপদে পড়ে কেঁদে কেঁদে উচ্চ আওয়াজে বলবে “ইয়া মুহাম্মাদাহ্ ও মুহাম্মাদাহ্”
عن زذان قال: سمعت كعب الاحبار يقول: فإذا وردوا علي مالك قال لهم: معاشر لاشقياء من اي امة انتم؟ فما ورد علي احسن وجوها منكم، فيقولون: يا مالك! نحن من امة القرأن، فيقول لهم مالك: معاشر الاشقياء! او ليس القرآن انزل علي محمد صلي الله عليه وسلم؟ قال: فيرفعون اصواتهم بالنحيب والبكاء فيقولون: وا محمداه يا محمداه اشفع لمن امر به الي النار من امتك،
অর্থঃ হযরত জাযান রহঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি হযরত কা’বুল আহবার রাঃ কে বলতে শুনেছি- যখন নবীজির গুনাহগার উম্মতগণ ফেরেশতা হযরত মালেক আঃ এর নিকট পৌছলে তখন তিনি তাদেরকে বললেন: হে হতভাগা সম্প্রদায়! তোমরা কোন নবীর উম্মত? আমার নিকট তোমাদের চেয়ে অধিক সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট পৌছেনি৷ তখন তারা বলবেন: হে হযরত মালিক আঃ আমরা কোরআন ওয়ালা নবীর উম্মত৷ তখন তাদেরকে মালেক ফেরেশতা বলবেন: হতভাগা সম্প্রদায়! কুরআন শরীফ কি হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিল করা হয়নি? বর্ণনাকারী বলেন: তারপর তারা উচ্চ আওয়াজে ক্রন্দন করতে থাকবে, তারপর বলবে: “ও মুহাম্মাদাহ্ ইয়া মুহাম্মাদাহ্” (ওগো মুহাম্মাদ হে মুহাম্মাদ!) আপনার উম্মতের যাদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে আদেশ করা হয়েছে তাদেরকে আপনি শাফায়াত করুন৷
সূত্রঃ
1• হিলইয়াতুল আউলিয়া, ইমাম আবু নুয়াঈম ইস্পাহানী, হাদিস নং-7743,
2• আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাছির, কিতাবুল ফিতান ওয়াল মালাহিম, খন্ড-2, পৃষ্ঠা-167,
•
আহলে হাদিসদের মান্যবর “ইবনে কাইয়ূম” উনার মতে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” নবীজির উপস্থিত ও অনুপস্থিত সর্বাবস্থায় বলা যায়ঃ
واما المسلمون فكانوا يخاطبونه: يا رسول الله، واذا كان هذا في خطابه فهكذا مغيبه،
অর্থঃ আর মুসলমানরা নবীজির সামনে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে নবীজিকে আহবান করতেন৷ আর এ আহবানটা যখন নবীজির সামনে করা হতো, সুতরাং নবীজির অনুপস্থিতিতেও এভাবে “ইয়া রাসুলাল্লাহ!” বলে আহবান করা হবে৷
সূত্রঃ
জালাউল আফহাম, আল্লামা ইবনে কাইয়ূম জাওযী,