মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
শেরপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপনও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জাল কাগজ ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে লোহাগাড়ায় সংবাদ সম্মেলন জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জাতীয় মানবাধিকার অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ভুরুঙ্গামারী সরকারি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী সিরাজগঞ্জ ৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পুনঃ বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল  আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আমাদের দায়িত্ব ও জনগণের প্রত্যাশা – আরমান হোসেন ডলার লন্ডনে গ্রেটার চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন, ইউকে’র উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত লালমনিরহাট টিটিসি’র প্রশিক্ষণের পরিবেশ বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে গিয়াস উদ্দিন  ভুরুঙ্গামারীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

রায়ের আগে দগ্ধ দেশ — রাজনৈতিক সংকটের আগুনে জনতার জীবন কেন বলি হবে?

রিপোর্টারের নাম / ৩৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

আওরঙ্গজেব কামালঃ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আবারও উত্তেজনার ঘনঘটা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালাতক শেখ হাসিনাসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় ঘোষণার

প্রাক্কালে সারাদেশ জুড়ে যে অস্থিরতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে—তা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বকেই চিহ্নিত করে না, বরং একটি গভীরতর রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাকেও সামনে আনে। প্রশ্ন জাগে—এই অনিশ্চয়তা ও ভয়, এই অগ্নিসংযোগ, এই নিরাপত্তাহীনতা—শেষ পর্যন্ত ভোগ করছে কারা? সাধারণ মানুষ।
যিনি রাজনীতি করেন না, যিনি বিচার কাঠামো বোঝেন না, যিনি শুধু জীবিকা
খুঁজে বের করতে চান—সেই মানুষই আজ সবচেয়ে বড় বলি। রায়ের আগে থেকেই দেশের নানা স্থানে অজ্ঞাত পরিচয় সশস্ত্র গোষ্ঠী কিংবা রাজনৈতিক অস্থিরতায় সুযোগসন্ধানীরা যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, গাছ কেটে রাস্তা অবরোধ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলা, কৌশলগত স্থাপনায় নাশকতার চেষ্টা—এসব ঘটাচ্ছে। অগ্নিসন্ত্রাস এখন যেন রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি ঘৃণ্য হাতিয়ার। কিন্তু আগুনে পুড়ছে বাস, দোকান, রিকশা, মানুষের সঞ্চয়, নিরাপত্তা—এগুলো কোনো
রাজনৈতিক দলের নয়। এগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের। তাহলে আমার প্রশ্ন রাজনৈতিক কাদের জন্য? যদি দেশের জনসাধারনের জন্য হয় তাহরে কেন সম্পাদ নষ্ট করা হবে। কেন সাধারন মানুষের জীবন বলি দিতে হবে। এই প্রশ্নের জবান কে দেবে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা—বিশেষ করে রাজধানীর আদালত প্রাঙ্গণ, কূটনৈতিক এলাকা, পরিবহন টার্মিনাল, জেলা শহরের
প্রশাসনিক ভবন—সবখানে অতিরিক্ত সেনা, পুলিশ ও র‍্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারের বক্তব্য, “যে রায় হবে—তা কার্যকর হবে, এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।নিরাপত্তা বাড়ানো প্রয়োজনীয়। কিন্তু প্রশ্ন
হলো—এই বাড়তি নিরাপত্তার বিল সাধারণ মানুষকেই কি দিতে হবে? যেখানে সামান্য বের হওয়াটাই এখন ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে সরকারের নিরাপত্তা উদ্যোগও মানুষের স্বস্তি ফেরাতে পারছে না। রাজনৈতিক সংকটের বিচারিক পরিণতিতে দেশ কোথায় দাঁড়িয়েছে? শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল। এর প্রক্রিয়া শুরু থেকে আজ পর্যন্ত রাজনৈতিক ময়দানকে উত্তপ্ত রেখেছে। আগেও আমরা দেখেছি—যখন জামায়াতের নেতাদের
বিরুদ্ধে রায় হয়েছিল,বিএনপির নেতার বিরুদ্ধে রায় হয়েছিল তখন একইভাবে
দেশব্যাপী সহিংসতা ছড়ানো হয়েছিল। সেই ইতিহাস আজ আবারও পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে—কিছুটা ভিন্ন চরিত্রে, কিন্তু একই ভয়ব্যঞ্জনায়। তবে দেশের
নিরাপত্তার সার্থে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। একটি কথা পরিষ্কার:
যে অপরাধই হোক—ন্যায়বিচার অবশ্যই হবে। কিন্তু ন্যায়বিচার তখনই গ্রহণযোগ্য
হয়, যখন তা স্বচ্ছ হয়। আশাকরি এ রায়ও স্বচ্ছ হবে। রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত
হবে। যে রঅয় জনসাধারণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে। এমন একটি বিচার চায় দেশবাসী। আজকের বাংলাদেশে সেই বিশ্বাসের ঘাটতি ভয়াবহভাবে স্পষ্ট। তার মুল কারন রানৈতিক দলের সমযোতার অভাব। ধ্বংসাত্মক ও হিংসাত্মক রাজনীতি এর জন্য
দায়ী। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতা · বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতার কারণ ও বৈশিষ্ট্য তার প্রতিবেশীদের থেকে স্বতন্ত্র৷. রাজনীতি চলমান। রাজনৈতিক সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান হওয়ার কথা ছিল কিন্ত রাষ্ট্র কেন সেটা করতে ব্যর্থ হলো? বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে একটি কুৎসিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে
উঠেছে—সমস্যা রাজনৈতিক হলেও সমাধান হয় রাস্তায়, আগুনে, সংঘর্ষে, আর শেষ পর্যন্ত আদালত বা প্রশাসনের হাতে। দলগুলির , ভিন্ন মত, একাধিক শক্তির লড়াই—শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করেই ঘটে। যেটা ইতিহাস প্রমানিত। বিগত সরকার যে ভাবে অবিচার অত্যাচার করেছে মামলার ও বিচারের মানে মানুষের জানমালের বিনষ্ট করেছে । হয়তো তারা আজ বুঝতে পারছে যে ক্ষমতার অপভ্যবহার করলে কি খেসারত দিতে হয়। তাই আমি মনে করি দেশে যেন অপরাধীদের সঠিক বিচার হয়। কোন প্রতিহিংসা যেন না হয়। বর্তমান রানৈতিক নেতৃবৃন্দ ক্ষমতাসীন বা বিরোধী কেউই টেবিলে বসে রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুঁজতে ইচ্ছুক নয়। আজ একই জোটের রাজনৈকিত নেতা বা একই দলের রানৈতিক নেতা পরস্পর বিরোধী আচারন করছে। রাজনীতি যখন সংলাপ হারায়, তখন দেশ হারায়
স্থিতি।রাষ্ট্র হারায় আস্থা।মানুষ হারায় নিরাপত্তা ও স্বাধীন জীবনযাপনের
অধিকার।একটি জাতি কি সংকটে না সংকৃত?অনেকে বলছেন—দেশ এখন একটি “সংকৃত জাতিতে” পরিণত হয়েছে।অর্থাৎ রাজনৈতিক ভাবে বিভাজিত সামাজিকভাবে
আতঙ্কগ্রস্ত প্রশাসনিক ভাবে অতি ভারাক্রান্ত । বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক
ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং নৈতিকভাবে ক্লান্ত হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে সঞ্চিত
রাজনৈতিক অবিশ্বাস আজ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। যেখানে আইন, রাজনীতি,
ন্যায়বিচার—সবকিছু নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। শেষ কথা: আগুন-রাজনীতির বলি যেন না হয় এই দেশের মানুষ । আজকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রায় নয়—বরং রায়ের পর দেশ কীভাবে স্থিতিশীল থাকবে। একটি পরিপক্ব রাজনৈতিক সমাজে বিচার হয়
আদালতে, ব্যক্তিগত ওয়ালেট বা দোকান-পাটে আগুন লাগিয়ে নয়, রাস্তা কেটে জনজীবন অচল করে নয়, অভিন্ন নাগরিকত্ব ও মানবাধিকারের পরিপন্থী আচরণ করে নয়। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে— ক্ষমতা জনগণের, রাজনীতি জনগণের, আদালতের রায়ও শেষ পর্যন্ত জনগণের অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় যাই হোক— বাংলাদেশ যেন আবারও রাজনৈতিক আগুনে দগ্ধ না হয়, এটা নিশ্চিত করা এখন সবার—রাষ্ট্র, দল, বিচারব্যবস্থা ও সমাজের দায়িত্ব।
লেখক ও গবেষকঃ
আওরঙ্গজেব কামাল
সভাপতি
আন্তর্জাতিক প্রেস ক্লাব
ও ঢাকা প্রেস ক্লাব


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর