মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
জাতীয় নাগরিক পার্টি শেরপুর জেলা শাখার সমন্বয় কমিটি গঠন শেরপুরের শ্রীবরদীতে সুদের টাকার জন্য গাছে বেঁধে নির্যাতন! লাকসাম ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত ঈদ পূনর্মীলনী ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার শিকার ছাত্রদল নেতার পাশে বগুড়া জেলা জিসাস নেতৃবৃন্দ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে নেশার টাকা না পেয়ে বাবা- মাকে পেটানোর অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে! সৈয়দ আফছার আলী ডিগ্রি কলেজে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি বরণ। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ১ যুগ পর কুরবানীর মাংস পেলো গুচ্ছগ্রামের মানুষ। ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারক বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি লাকসাম উপজেলা কমিটি গঠন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে পবায় আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠিত

হারিয়েছিলেন ময়মনসিংহ থেকে, পাওয়া গেল ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা : / ১৪৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪


কথা কম বলেন তরুণ। বৃদ্ধ এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্য জানতে চাইলেন, ‘লোকটি কে? তাঁকে চেন?’ এবার কথা ফুটল তরুণের মুখে, ‘আব্বা’। মুখে তাঁর হাসি। ২২ বছর বয়সী তরুণ এগিয়ে গেলেন, প্রায় এক বছর পর ধরলেন বাবার হাত। সেই হাত আর ছাড়ছিলেন না।

তরুণের নাম মো. মনজুরুল। বাবার নাম হালিম উদ্দিন। বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার হাজমপাড়া গ্রামে। মনজুরুল আগে সুস্থ-স্বাভাবিকই ছিলেন। বয়স যখন ১২, তখন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। গত রমজানের ২৭ তারিখ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তারপর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। হারানো ছেলেকে খুঁজে পেতে হালিম উদ্দিন অন্তত ১২ জন কবিরাজের কাছে গিয়েছেন। কবিরাজদের কেউ বলেছিলেন, মনজুরুল ঢাকায় গেছে। কেউ বলেছিলেন অন্যখানে। তবে তাঁর সন্ধান পাওয়া গেল ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার মুক্তারপুর গ্রামে।

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অনুরোধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ৩৭ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে মনজুরুলকে হস্তান্তর করেন। এরপর মনজুরুলকে বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে আনা হয়। রাত সাড়ে ৮টায় তাঁকে বাবার কাছে তুলে দেওয়া হয়। ছেলেকে নিয়ে রাতেই হালিম উদ্দিন বাড়িতে রওনা দেন।

বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে হালিমের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই ডালিম আলী। তিনি জানালেন, প্রায় দুই মাস আগে তাদের এলাকার এক ছেলে ফেসবুকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি ভিডিও দেখে মনজুরুলকে চিনতে পারে। সংবাদটিতে বলা হয়, ‘চার মাস আগে ছেলেটিকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখে মায়া হয় মুক্তারপুরের মাসুম আলীর। তিনি তাকে বাড়ি নিয়ে যান। স্ত্রী শেফালি বিবি চার মাস ধরে দেখাশোনা করছেন। নাম-ঠিকানা বলতে পারছে না বলে তাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’

এই ভিডিও দেখে ছেলেকে ফিরে পেতে ব্যাকুল হয়ে ওঠেন বাবা হালিম আলী। তিনি ছুটে যান বিজিবির স্থানীয় ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু ভারতের ওই এলাকা বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের বিপরীতে। তাই বিষয়টি তাদের জানানো হয়। এরপর ওই ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে বিএসএফকে বিষয়টি জানিয়ে মনজুরুলকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি যে বাংলাদেশি, সেই প্রমাণও পাঠানো হয়। এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিএসএফ রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে তাঁকে বিজিবির কাছে পুশব্যাক করে।

বিজিবি ধারণা করছে, ময়মনসিংহ সীমান্ত পেরিয়েই মনজুরুল ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ঢুকে পড়েছিল। তারপর প্রায় আট মাসে সে মেঘালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে। রাতে বিজিবির ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে মনজুরুলের বাবা হালিম উদ্দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সেদিন ২৭ রমজান। সন্ধ্যা ৭টার সময় বাড়ি থাইকা বের হইছে। সাথে সাথে আমিও খুঁজতে বারাইছি। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ পাইছি না। নাই! নাই, নাই, নাই। বাড়িত থেইক্যা বর্ডার পনযোন্ত খোঁজাখুঁজি কইরা পাইছি না। মাইনষে আমাকে বলছিল, কবিরাজ ধরো। পরে কবিরাজ ধরসি। কবিরাজ ধরলে কয়, ডে ডাহা (ঢাকা) গেছে গা। এইহানে গেছে গা, ওইহানে গেছে গা। তাবিজ দিলে, সুলা দিলে আইব। কিন্তু ছেলে তো আর ফিরা আসে না।’

হালিম বলেন, ‘ছেলের লাইগা তো দুশ্চিন্তা ছিল। তার মা তো অসুস্থ হইয়া পড়ছে। আমার শরীলের অবস্থাডা তো দেকছেনই। ভাত দিলে আমি খাই না। ঠেলা মাইরা ফালাইয়া দিই। পাগল হইলেও তো মনে আমার ছেলে। বাড়িত থাকলে আমার শান্তি লাগে। পাগলডারে আমি ফালাই কই? ভালাডা (বাড়িতে থাকা সুস্থ ছেলে) রাইখে আমি পাগলডারে ফালতে পারতাম! স্যারেরে (বিজিবিকে) ধন্যবাদ। অসম্ভব কাজ কইরা আমার ছেলেরে আইনা দিছে।’

বিজিবির রাজশাহীর- ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউল ইসলাম মণ্ডল বললেন, ‘অন্য একটি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে, প্রতিবন্ধী এই ছেলে আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকার বিপরীতে ভারতে আছে। খবর পেয়ে বিএসএফকে অনুরোধ করি যেন ছেলেটিকে খুঁজে বের করা হয়। আমার অনুরোধ গ্রহণ করে তারা দুই দিন পর আমাকে জানায় যে, তারা একটি প্রতিবন্ধী ছেলেকে খুঁজে পেয়েছে এবং সে বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর আমি এখান থেকে প্রমাণপত্র পাঠাই। সেটি দেখে তারা ছেলেটিকে ফেরত দিয়েছে। ছেলেটিকে ফেরত আনা আমাদের কাজ ছিল। এটা আমাদেরই দায়িত্ব। তার পরও অসহায় প্রতিবন্ধী ছেলেটিকে তার বাবার হাতে তুলে দিতে পেরে বিশেষ ভালো লাগা কাজ করছে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর