মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
জাতীয় নাগরিক পার্টি শেরপুর জেলা শাখার সমন্বয় কমিটি গঠন শেরপুরের শ্রীবরদীতে সুদের টাকার জন্য গাছে বেঁধে নির্যাতন! লাকসাম ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজিত ঈদ পূনর্মীলনী ও পরিচিতি সভা অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার শিকার ছাত্রদল নেতার পাশে বগুড়া জেলা জিসাস নেতৃবৃন্দ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে নেশার টাকা না পেয়ে বাবা- মাকে পেটানোর অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে! সৈয়দ আফছার আলী ডিগ্রি কলেজে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি বরণ। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ১ যুগ পর কুরবানীর মাংস পেলো গুচ্ছগ্রামের মানুষ। ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারক বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি লাকসাম উপজেলা কমিটি গঠন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে পবায় আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠিত

মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণ, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষক গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা / ১২৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় ২০২০ সালে একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধভাবে গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষক সালাউদ্দিন (২২)’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ ভুইগড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এছাড়াও ১২ টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার সাইদুর রহমান মানিক (৩৫)’কে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।

রবিবার ( ৩১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২০ সালে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় একই সঙ্গে মা ও মেয়েকে হাতমুখ বেঁধে চাঞ্চল্যকর গণধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কুখ্যাত ধর্ষক সালাউদ্দিন মিয়া (২২),গতকাল সিদ্ধিরগঞ্জ ভূইগড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুন হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানাধীন জিবধরছড়া এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন এবং মামলার অপর আসামী শাকিল ও হারুন একই এলাকায় বসবাস করতো। গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন একসঙ্গেই শাকিল ও হারুনের সাথে দিন মজুরের কাজ করতো এবং অধিকাংশ সময় একসাথেই কাটাতো।

ভিকটিমের পূর্ব পরিচিত পলাতক শাকিল অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করে যে, ভিকটিম বিউটি ও তার মা আমেনা বেগম ছাড়া তাদের বাড়িতে অন্য কেউ থাকে না। ভিকটিম বিউটি আক্তারের ছোট ভাই সবুর বেল কোম্পানীতে চাকরি করায় বাড়িটি ছিল পুরুষশুন্য। ভিকটিমদের নির্জনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আসামিদের মধ্যে যৌনলিন্দা পূরণের আকাঙ্খা তৈরী হয়।

যৌন আকাঙ্খা পূরণে তারা ভিকটিমদের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করে। সুযোগবুঝে ভিকটিমদের পূর্ব পরিচিত শাকিল গত ২০২০ সালের ২ অক্টোবর রাতে ভিকটিমদের বাড়িতে এসে তাদের দরজায় ধাক্কা দিয়ে চাচী চাচী বলে ডাকতে থাকে। পূর্ব পরিচিত শাকিলের ডাকগুনে ভিকটিমরা ঘরের দরজা খুলে বাহিরে বের হয়ে আসে। বাহিরে এসে তারা শাকিলের সাথে আরও দুইজন অপরিচিত ব্যক্তি সালাউদ্দিন ও হারুনকে দেখতে পায়।

শাকিল জরুরী কথা আছে বলে ঘরের ভিতরে বসতে চায়। ভিকটিমরা তখন শাকিলসহ তার সহযোগীদেরকে সরল বিশ্বাসে তাদের ঘরের মধ্যে বসতে দেয়।

পরিকল্পনা মোতাবেক কিছুক্ষন পর শাকিল হঠাৎ তাদের ঘরে সৌর বিদ্যুৎতের আলো নিভিয়ে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে সালাউদ্দিন, শাকিল ও হারুন তিনজন মিলে ভিকটিম বিউটি এবং তার মা আমেনা খাতুনের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির কারনে ভিকটিমরা চিৎকার করতে শুরু করলে শাকিল তার হাতে থাকা দা দিয়ে তাদেরকে কেটে ফেলার ভয় দেখায় এবং বাহিরে তাদের আরও অনেক লোক আছে বলে হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামিরা কাপড় দিয়ে ভিকটিম মা ও মেয়ের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং জোরপূর্বক পালাক্রমে মা ও মেয়েকে একই সাথে দলবদ্ধভাবে গণর্ধষণ করে। আসামিরা ধর্ষণের ঘটনাটি কাউকে জানালে তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আসামিরা চলে গেলে ভিকটিমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যের নিকট বিষয়টি জানায়। ইউপি সদস্য। ভিকটিমদেরকে চুনারুঘাট থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ভিকটিম বিউটি বাদী হয়ে চুনারুঘাট থানায় শাকিল, সালাউদ্দিন ও হারুনের নাম উল্লেখ করে ২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করে। মামলা রুজুর পর অভিযুক্ত সালাউদ্দিন ও শাকিল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং কিশোর হারুন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। 8 মামলার দীর্ঘ বিচারিক পক্রিয়া শেষে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখ হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিজ্ঞ বিচারক গ্রেফতারকৃত সালাউদ্দিন ও পলাতক শাকিল এর অনুপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সাজা প্রদানের রায় ঘোষনা করেন। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে নাম পরিচয় আত্মগোপন করে অটো রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করে। রাজধানীতে ৪-৫ মাস থাকার পর সে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন ভূইগড় এলাকায় চলে যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

এদিকে দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দারের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন ইপিজেড এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন থানায় সশস্ত্র ডাকাতির অভিযোগে মোট ১২টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত দীর্ঘদিন যাবৎ পলাতক দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার সাইদুর রহমান মানিক (৩৫) কে গততকাল গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।

গ্রেফতারকৃত আসামি সাইদুর রহমান মানিক পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার আতঙ্ক সশস্ত্র আন্তঃজেলা ডাকাত দল “মানিক বাহিনীর” সর্দার। তার নেতৃত্বে পটুয়াখালীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রায় ২০ টিরও অধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে বরগুনা জেলার আমতলী বাজার থানায় ৫ টি ডাকাতি মামলা ও ২ টি অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে। এছাড়াও পটুয়াখালী সদর থানায় ০৫ টি ডাকাতি মামলাসহ তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ১২ টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত মানিক উক্ত মামলাসমূহের ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, বহুল আলোচিত ২০১৫ সালে পটুয়াখালী সদর থানাধীন মাদারবুনিয়া ও বোতলবুনিয়া গ্রামে একই রাতে তিনটি বসতবাড়িতে ডাকাতির ঘটনাটি তার নেতৃত্বেই ঘটেছিল।২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত মানিকের নেতৃত্বে ডাকাত দলের অপরাপর সদস্য নড়াইল শহীদ, নাদ্রা আল আমিন, রাসেল তালুকদার, জব্বার, রাকিব হাওলাদার, আলামিন মাতুব্বর, কামাল মাতুব্বর, চাঁন হাওলাদার, বশির সরদারসহ ১ থেকে ১২ জন সদস্যের একটি ডাকাত দল মানিকের বাড়িতে বসেই ডাকাতির প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। পরে বোতলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মমতাজের বাড়িতে তারা দেশীয় তৈরী ওয়ানশুটারগান, রামদা, হাসুয়া, দা, শাবল, ছোরা প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে দরজা ফাঁকা করে কৌশলে দরজা ভেঙে বসতবাড়িতে প্রবেশ করে। বাড়িতে বসবাসরত সকল সদস্যকে ঘুম থেকে তুলে মারধর করে একটি কক্ষে এনে চোখ, হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং কোনরকম শব্দ করলে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে দুইজন ডাকাত বাড়ির বাহিরে পাহাড়ায় থাকে এবং বাকি সকল ডাকাত গ্রেফতারকৃত মানিকের নেতৃত্বে বাড়িতে রক্ষিত নগদ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়।

পরে মমতাজের পাশ্ববর্তী পাড়ার বাসিন্দা আজিজ মাঝির বাড়িতে লোহার শাবল দিয়ে কৌশলে দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। বাড়ির মালিক আজিজ মাঝি, তার স্ত্রী, বোন, দুই ছেলে এবং ছেলের স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে বারান্দায় হাতমুখ বেধে উপুড় করে ফেলে রাখে। দুইজন পাহাড়ায় থেকে বাকি সদসারা বাড়িতে রক্ষিত নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকারসহ অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে পরবর্তী টার্গেটকৃত বাড়ির দিকে রওনা করে।

এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃত মানিক আলিম পাশ জানিয়ে তিনি বলেন, সে চাকরি না পাওয়ায় ২০০৪ সাল হতে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিজ এলাকায় রাইড শেয়ার করতো। তখন তার ডাকাতি কার্যক্রমের অন্যতম সহযোগী নড়াইল শহীদ এর সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে ২০১৫ সালে অবৈধভাবে জনগণের সম্পদ লুট করে অর্থ উপার্জনের লোভে সে ডাকাতির কাজে জড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালে একাধিক ডাকাতির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী হওয়া শুরু হলে সে পালিয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন চর সুমিলপাড়া এলাকায় আত্মগোপন করে। আত্মগোপনে থাকাকালীন সে একটি সিকিউরিটি কোম্পানীতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে চাকরি করতো এবং প্রকৃত নাম পরিচয় গোপন করে সে নিজেকে সাঈদ নামে পরিচয় দিত।

গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর