মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
শেরপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপনও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জাল কাগজ ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে লোহাগাড়ায় সংবাদ সম্মেলন জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জাতীয় মানবাধিকার অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ভুরুঙ্গামারী সরকারি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী সিরাজগঞ্জ ৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পুনঃ বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল  আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আমাদের দায়িত্ব ও জনগণের প্রত্যাশা – আরমান হোসেন ডলার লন্ডনে গ্রেটার চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন, ইউকে’র উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত লালমনিরহাট টিটিসি’র প্রশিক্ষণের পরিবেশ বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে গিয়াস উদ্দিন  ভুরুঙ্গামারীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

কারো জন্য কিছুই করা হয়ে উঠে না

রিপোর্টারের নাম / ১৩৯ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: সোমবার, ৬ মে, ২০২৪



আমি সাংবাদিক, আমি সম্পাদক, নেতা কিংবা প্রভাবশালী কেউ। কিন্তু এ সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করতে পারি না, কিছুই করা হয় না। বক্তৃতা, বিবৃতি, টক শো’তে সমাজকে উদ্ধার করতে, দেশকে এগিয়ে নিতে কতই না বাহাদুরি আমার। অথচ সমাজ বিনষ্টকারী, তরুণ-যুবদের নষ্ট পথের দিশারী, বেশ পরিচিত এক মাদক ব্যবসায়ীকে ভালো হওয়ার সুযোগটুকু দিতে পারি না আমি।
ওই মাদক ব্যবসায়ী আকুতি জানিয়ে বলেছিল, আমি অন্ধকার পথ ছেড়ে আলোর পথে আসতে চাই। নোংরা কর্দমাক্ত পথ চলতে চলতে ক্লান্ত আমি। গাড়ির ড্রাইভিং ভালো জানি, লাইসেন্সও আছে – তবে মেয়াদোত্তীর্ণ। একটা লাইসেন্স করে ড্রাইভিংয়ের চাকরি দিয়ে দেন প্লীজ। ৮/১০ হাজার টাকা বেতন হলেও হবে। বিশ্বাস করুন আমি সব ছেড়ে ভালো হয়ে যাবো। তার করুন আকুতিতে মন গলেছে আমার,,, কিন্তু দুই মাসেও তাকে লাইসেন্স করিয়ে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারিনি।

আরেকজন তরুণীকে চিনি আমি। যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আর প্রতি ভোরে কোরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে দিন শুরু হতো তার। নিজের মা, দুই সন্তান আর দুই ভাতিজির সংসার নির্বাহ করতে গিয়ে দিশেহারা ওই নারী। অনেক ঘোরাঘুরি করে একটা গার্মেন্টেও একটা চাকরি জোটাতে পারেননি। উপায়ন্তরহীন অবস্থায় বারের ড্যান্সার হয়ে কোনমতে জীবন চালাচ্ছেন। এরমধ্যে তিন ওয়াক্তের নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ হয়েছে কোরআন তেলওয়াতও। কিন্তু সম্ভ্রম ধরে রাখা ডান্সারের আয়েও সংসারের চাকা চলছে না তার। সব কিছুতে রাজি থাকলে তিন বেলা খাওয়া পড়ার নিশ্চয়তা মিলবে। কিন্তু ওই নারী এখন হন্যে হয়ে একটা বৈধ কাজ খুঁজছেন, নিদেনপক্ষে কোনো দোকানের সেলস এর কাজ হলেও চলবে তার। মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতন হলেও ১২ ঘণ্টা করে শ্রম দিতে তার অনিহা নাই।

ভালো থাকার নিদারুণ আকুতিতে মন গলেছে আমার, তার চোখের পানি আমাকেও ব্যথিত করেছে,,, কিন্তু তাতে কি? আমিতো তার জন্য একটা সেলসম্যানের চাকরিও জুটিয়ে দিতে পারিনি।

আরেকজন তরুণকে চিনি আমি, যে অসহায় মাকে গ্রামের বাড়ি রেখে এক পোশাকে ঢাকায় এসেছে। বলে এসেছে, মা ঢাকায় কামলাগিরি করে হলেও তোমার খরচ পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি চার মাস যাবত ঢাকায় ঘুরে ঘুরে বড়ই ক্লান্ত। এখানে চাকরি বাকরি দূরের কথা নিজের খাওয়া থাকারও নিশ্চয়তা করতে পারেনি। বেশ কদিন ধরে কমলাপুর স্টেশনেই রাত কাটায় সে, দিনে একবার খাওয়ারও পথ নেই তার। দুদিনের অনাহারী অবস্থায় এনে তিন দিন আমার বাসায় রেখেছি, শেষ দিন দুপুরে খাইয়ে ৫শ টাকা ধরিয়ে বিদায় দিয়েছি তাকে। গত ১০/১২ দিন সে কোথায় থাকছে, কি খাচ্ছে, তার মায়ের অবস্থাই বা কি সেসবের কিছুই জানা হয়নি আমার।

প্রতিবেশী অপরাধীকে মাদক ব্যবসা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিল শরিফুল। একই টিনশেড বিল্ডিংয়ে ভাড়া থাকায় রাত দিন মাদকসেবীদের আনাগোনায় স্বপরিবারে শরিফুলের অবস্থান করা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। এ জন্যই অনুরোধ করেছিল যে, বাসার বাইরে মাদক ব্যবসা চালাতে। এতে ওই মাদক ব্যবসায়ী মাইন্ড করেছে। তাই সে রাতেই বিশ পিচ ইয়াবা দিয়ে উল্টো শরিফুলকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়া হয়। কোলের শিশু সন্তান নিয়ে খুব বিপাকে পড়েন শরিফুলের স্ত্রী। বলেন, মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতনে মুদি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করা শরিফুল জীবনে পান, সিগারেট, চা পর্যন্ত পানাহার করেন না।

যে রাতে শরিফুলকে গ্রেফতার হন পরদিন সকালে রান্নার মত একমুঠো চাল কিংবা বাজার বলতে কিছুই ছিল না তার ঘরে। হাতে ছিল না টাকা পয়সাও। কি করবে কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না শরিফুলের অসহায় স্ত্রী। বিলাপ কান্না ছাড়া যেন কিছুই করার ছিল না তার। যাকে পাচ্ছিলেন তারই হাত পা জড়িয়ে ধরে তিনি শুধু শরীফুলকে মুক্ত করে দেয়ার আর্তনাদ করছিলেন। বলছিলেন, স্বামীকে ছড়াতে পারলে এক মুহূর্তও আর ঢাকা থাকবেন না তিনি, চলে যাবেন ভোলার গ্রামে। তার কান্নাকাটিতে হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যন্ত্রণায় ব্যথিত হয়ে নিজের মনটাও। থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, শরিফুলকে গ্রেফতারের পরদিনই আদালতে চালান দেয়ায় জেলে পাঠানো হয়েছে তাকে। এবার উকিল, আদালত, জামিন আবেদনের দীর্ঘ সূত্রীতায় আটকে পড়ে শরিফুলের জীবন। অপরদিকে মাত্র ৭/৮ দিনের ব্যবধানে ঘর ভাড়া প্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় শরিফুলের তরুণী স্ত্রীকে বিতাড়িত করে দিয়েছে বাড়ির মালিক। শহরের কিছু না চেনা মেয়েটি তার কোলের শিশু নিয়ে কোথায় ঠাঁই জুটিয়েছে, কোথাও কি মিলছে দু’মুঠো খাবার? সে খবরটুকু জানাও সম্ভব হয় না আমার।

জীবনের এমন ছোট ছোট আর্তি আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে। নানা সীমাবদ্ধতায় সেগুলোর দায় এড়িয়ে চলি আমরা, গায়ে মাখাই না। মনে করি উটকো ঝামেলা। অথচ আমাদের কারো কারো উদ্যোগহীনতায় একেকটি জীবন ঝরে যায়, ধ্বংস হয় অজস্র পরিবার।

আসলে বক্তৃতার মঞ্চে, ফেসবুকের টাইম লাইনে অনেক কিছু বলা যায়, অনেক কিছুই করে ফেলা যায় কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি কঠিন। সেখানে কারো জন্য মঙ্গলজনক কিছু করা হয়ে উঠে না সহজে। এরজন্য প্রয়োজন সমমনাদের সমন্বিত উদ্যোগ, এগিয়ে আসার আন্তরিকতা।



আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর