মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০০ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
শেরপুরে মহান বিজয় দিবস উদযাপনও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধা জাল কাগজ ও মিথ্যা মামলায় হয়রানির অভিযোগে লোহাগাড়ায় সংবাদ সম্মেলন জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জাতীয় মানবাধিকার অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া জেলা কমিটির উদ্যোগে বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ভুরুঙ্গামারী সরকারি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী সিরাজগঞ্জ ৩ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পুনঃ বিবেচনার দাবিতে গণমিছিল  আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আমাদের দায়িত্ব ও জনগণের প্রত্যাশা – আরমান হোসেন ডলার লন্ডনে গ্রেটার চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন, ইউকে’র উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উদযাপিত লালমনিরহাট টিটিসি’র প্রশিক্ষণের পরিবেশ বিনষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে গিয়াস উদ্দিন  ভুরুঙ্গামারীতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

সৌদি আরবে ‘জিয়া ট্রি’র ইতিহাস: মরুভূমিতে বাংলাদেশের সবুজ স্মৃতি

✍️ মাঈনুদ্দীন মালেকি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে / ৩০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

✍️ মাঈনুদ্দীন মালেকি
সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে

বাংলাদেশের ইতিহাসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কেবল একজন নেতা নন, বরং কূটনৈতিক বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার জন্যও আজো স্মরণীয়। তাঁর দূরদর্শী এক সিদ্ধান্তের ফলেই আজ সৌদি আরবের মরুভূমি জুড়ে শীতল সবুজ ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার নিমগাছ—যা ইতিহাসে পরিচিত “জিয়া ট্রি” বা “জিয়া গাছ” নামে

১৯৭৭ সালে সৌদি বাদশাহ ফাহদের আমন্ত্রণে জিয়াউর রহমান সৌদি আরব সফরে যান। রাষ্ট্রীয় সফরে সাধারণত সোনাদানা, রত্ন বা দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী উপহার দেয়া হয়। কিন্তু জিয়া নিলেন এক ভিন্ন পথ। তিনি সাথে করে নিয়ে গেলেন কিছু নিমগাছের চারা। বাদশাহ ফাহদকে উপহার দেওয়ার সময় জিয়া বলেন— “গরিব মানুষের দেশের গরিব রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে এই সামান্য উপহার গ্রহণ করুন।”

বাদশাহ ফাহদ মুহূর্তেই আবেগে আপ্লুত হন। বহু মূল্যবান উপহার পেলেও এত গভীর তাৎপর্যপূর্ণ উপহার তিনি আগে পাননি। জড়িয়ে ধরেন জিয়াকে এবং ঘোষণা দেন—বাংলাদেশ ও সৌদি আরব চিরকালের অকৃত্রিম বন্ধু।

বাদশাহ ফাহদ বাংলাদেশকে আর্থিক সহায়তা দিতে চাইলে জিয়া উত্তর দেন— “আমাদের দেশের মানুষ গরিব, কিন্তু তারা পরিশ্রমী। আপনি চাইলে আমাদের শ্রমিকরা আপনার উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারবে।”

এর ফলেই প্রথমবারের মতো সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের দুয়ার খুলে যায়। লাখো মানুষ কর্মসংস্থান পায়, বদলে যায় তাদের ভাগ্য, স্বাবলম্বী হয় পরিবার ও গ্রামবাংলা। বলা চলে, জিয়ার সেই উদ্যোগই বাংলাদেশের বিদেশি শ্রমবাজারে প্রবাসী কর্মসংস্থানের যুগের সূচনা।

জিয়ার উপহার দেয়া নিমগাছ সৌদি আরবের উষ্ণ মরুভূমিতে আশ্চর্যভাবে টিকে যায়। দেখা যায়—খেজুরগাছ শুধু ফল দেয়, কিন্তু নিমগাছ ছায়া দেয় এবং সামান্য পানিতেই বহু বছর বেঁচে থাকতে পারে। তাছাড়া নিমগাছ বাতাসে আর্দ্রতা ধরে রাখে, পরিবেশকে শীতল করে এবং রোগব্যাধি কমাতেও কার্যকর।

১৯৮৩-৮৪ সালে সৌদি সরকার আরাফাত ময়দানে হাজার হাজার নিমগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়। ধীরে ধীরে জিয়ার দেয়া চারাগুলো মহীরূহে রূপ নেয়। আজ আরাফাতের ময়দানে হাজীরা সেই নিমগাছের ছায়ায় হজ পালন করেন। প্রচণ্ড গরমে নিমগাছের ঠাণ্ডা বাতাস হাজীদের প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।

আজ আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে চারপাশে তাকালে দেখা যায় অসংখ্য নিমগাছের সারি। বিশেষ করে জাবালে রহমত (রহমতের পাহাড়) থেকে তাকালে বিশাল প্রান্তরজুড়ে যেন সবুজের সমুদ্র। সেই সবুজই বহন করে বাংলাদেশের এক অমর স্মৃতি—জিয়া ট্রি।

১৯৭৭ সালের সেই ছোট্ট উপহার আজ ইতিহাসের অংশ। নিমগাছ হয়ে উঠেছে এক বন্ধুত্বের প্রতীক, শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার এক বাস্তব সাক্ষ্য, এবং বাংলাদেশি প্রবাসীদের ঘাম ও রক্তের প্রতীক। সৌদি আরবে নিমগাছ আজ শুধু বৃক্ষ নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের বন্ধুত্বের জীবন্ত ইতিহাস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর