ঈদ মানে আনন্দ আর ঈদ মানেই খুশি,আবার ঈদ মানেই বাড়তি আয়ের উৎসও বটে। আর তাইতো পবিত্র মাহে রমাদানুল মোবারক মাস এলেই যেমন প্রতিটি পেশায় বাড়তি চাপ পড়ে এর ব্যতিক্রম নয় মাহালী সম্প্রদায়ও।তাই পবিত্র ঈদ-উল ফিতের কে সামনে রেখে মাসব্যাপী বাঁশ দিয়ে সেমাই খাঁচী তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন জয়পুরহাটের মাহালী সম্প্রদায়।
প্লাষ্টিকের নানন্দনিক ছোঁয়ায় ও পলিথিনের বহুমাতিক ব্যবহারের কারনে মাহালী সম্প্রদায়ের বাঁশশিল্পের কারিগররা অনেকটায় পড়েছেন বিপাকে।একদিকে বাঁশের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে সেমাই খাঁচির চাহিদা ও বেচাকেনা কমে যাওয়ায় মাহালী পরিবারগুলোকে বছরের বেশীরভাগ সময় অলসভাবে পার করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,জেলার খঞ্জনপুর, দুর্গাদহ ও পাঁচবিবির দমদমা সহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা প্রায় চার শতাধিক মাহালী পরিবারের বসবাস। বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র বিক্রি করে কোনোরকমে চলে যাদের সংসার।
তবে রমজান মাস এলেই এ সম্প্রদায়ের অনেকটায় বেড়ে যায় কর্মপরিধি। এ মাসে তারা যে রোজগার টুকুন করেন তা দিয়ে চলে যায় খুববেশী দুই-তিন মাস। কিন্তু এবার চিত্র ব্যতিক্রম । খাঁচির পরিবর্তে পলিথিনের বস্তায় সেমাই বাজারজাত করায় কাহের পরিধি কমেছে অনেকটায়।
খঞ্জনপুর এলাকার বাঁশশিল্পের কারিগর কৈলাশ দ্যা পিপলস নিউজ২৪কে বলেন, ঈদ সামনে রেখে খাঁচি তৈরি করলেও ব্যবসায়ীরা অল্প খরচে পলিথিনের বস্তায় সেমাই বাজারজাত করায় এবারে আমাদের ব্যবসা মন্দা।
একই গ্রামের বাঁশের ডালা তৈরী করেন জয়ন্তী রানী,কথা বললে তিনি বলেন, আমার সংসারে পাঁচজন লোক খায়।প্রতিদিন সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমাদের হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বাঁশের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। তাই পূর্বপুরুষের এ পেশাকে ধরে রাখার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে মাহালী সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নতুনহাট এলাকার সেমাই বিক্রেতা দোলন ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী দোলন কুণ্ডু বলেন, আমার সেমাই বিক্রির বয়স প্রায় ২০ বছর পার। আগে সেমাই আসতো খাঁচিতে , সেখান থেকেই বিক্রি করতাম। কিন্তু দু বছর ধরে খাঁচির পরিবর্তে সেমাই আসছে পলিথিন ব্যাগে ।পলিথিনে সেমাই রাখাও সুবিধা আর অল্প জায়গায় রাখা যায় বেশি।
সোহেল আহম্মেদ একজন মুদি দোকানি তিনি বলেন,খাঁচিতে সেমাই বিক্রি করলে ঈদ ঈদ মনে হয়,কারন এটা একটা পুরনো ঐতিহ্য। এখনকার দিনে পলিথিন ব্যাগে সেমাই আসায় আগের মতো সেই উপলব্ধিটা আর নেই।তাই পলিথিন ব্যাগে সেমাই আসায় বাঁশের কারিগরদের আয়-রোজগারও কমে গেছে। আগের বছরগুলোতে তারা এসময় খুব ব্যস্ত থাকতো কিন্তু এখন তাদের সেই ব্যস্ততা আর চোখে পড়ে না ।
এ বিষয়ে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের নমুনা সংগ্রহকারী এ কে এম জিয়ায়ুল হক দ্য পিপলস নিউজ২৪কে বলেন, পলিথিন পরিবেশের সাথে সাথে মানবদেহেরও ক্ষতি করছে। কিছু পণ্য মোড়কজাত করার জন্য সরকারের অনুমোদন থাকলেও সেমাই রাখার জন্য যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে আসলে তার কোনো অনুমোদন নেই। তারপরও অনেক সেমাই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান খাঁচির পরিবর্তে পলিথিন ব্যবহার করছেন।
জয়পুরহাট বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ দ্যা পিপলস নিউজ২৪কে বলেন, জেলায় চার শতাধীকেরও বেশি মাহালী পরিবারের বসবাস। তারা চাইলে বিসিকের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।
অত্র এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার সচেতন নাগরিকগণ বলেন, আধুনিকতার আদলে প্লাষ্টিকের দাপটে বাঁশশিল্পের সাথে জড়িত শ্রমজিবীরা এখন করুন অবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করছেন।তাই এ সম্প্রদায়ের জীবন মান উন্নয়নে দল মত জাতী,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের এগিয়ে আশা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।