মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ০৫:৪১ অপরাহ্ন
আজকের শিরোনাম
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী হামলার শিকার ছাত্রদল নেতার পাশে বগুড়া জেলা জিসাস নেতৃবৃন্দ শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে নেশার টাকা না পেয়ে বাবা- মাকে পেটানোর অভিযোগ ছেলের বিরুদ্ধে! সৈয়দ আফছার আলী ডিগ্রি কলেজে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কলেজ ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি বরণ। শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ১ যুগ পর কুরবানীর মাংস পেলো গুচ্ছগ্রামের মানুষ। ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারক বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি লাকসাম উপজেলা কমিটি গঠন মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে পবায় আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠিত সরকারি যাত্রী ছাউনিতে অবৈধ বাস কাউন্টার, নির্বিকার প্রশাসন, বিপন্ন জনস্বার্থ। পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঝিনাইগাতীর বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মো: শাহজালাল  ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনজেএফ ঠাকুর গাঁও জেলা কমিটি সভাপতি সাংবাদিক মোঃ মাহফুজুর রহমান

‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সেই আমার সন্তানকে হত্যা করল!’

অনলাইন ডেস্ক: / ১৫৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট: বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪

ময়মনসিংহ সদরের মনতলা ব্রিজের নিচ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর লাগেজবন্দি চার খণ্ড লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ওই তিনজনের মধ্যে ওমর ফারুকের চাচা ইলিয়াস উদ্দিন রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বাকি দুজনের নাম জানায়নি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ গুমে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারও উদ্ধার করা হয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম ওমর ফারুক সৌরভ (২৩)। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তার বাবার নাম ইউসুফ আলী। তিনি চাকরি করেন ডাক বিভাগে। মা মাহমুদা আক্তার পারুল গৃহিণী। সৌরভ গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় মতিঝিলে বসবাস করেন।

গত ২ জুন সকালে ময়মনসিংহ সদরের সীমান্তবর্তী মনতলা ব্রিজের নিচে সুতিয়া নদী থেকে সৌরভের চার টুকরো করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুতিয়া নদী থেকে কালো রঙের একটি ট্রলিব্যাগ থেকে তিন টুকরো এবং পাশেই একটি বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় মাথা উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ৩ জুন রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়।

ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইউসুফ আলী বাদী হয়ে ২ জুন রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, আপন চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভাকে বিয়ে করাকে কেন্দ্র করে পারিবারিক বিরোধে সৌরভকে খুন করা হয়েছে। এর পেছনে সৌরভের আপন চাচা ও ইভার বাবা ইলিয়াস আলী জড়িত বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার রাতে ইলিয়াস আলী ও তার স্ত্রীকে হেফাজতে নিয়েছে বলে জানায় একটি সূত্র।

পারিবারিক সূত্র জানায়, সৌরভের সঙ্গে দীর্ঘদিন প্রেম চলছিল তার চাচাত বোন ইভার। উভয়ই পরিবারকে না জানিয়ে ১২ মে ঢাকার একটি বাসায় তারা বিয়ে করেন। এর পর ইভা ময়মনসিংহের নিজ বাসায় চলে আসেন। তাদের বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হতেই উভয় পরিবারের মধ্যে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ১৬ মে ইভাকে জোর করে কানাডা পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। এর মধ্যেই ইভার বাবা ইলিয়াস আলী আপন বড় ভাই সৌরভের বাবা ইউসুফ আলীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিলেন। ইভা ইলিয়াস আলীর একমাত্র মেয়ে।

ইউসুফ আলী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘যে ভাইকে বাবার স্নেহ দিয়ে বড় করেছি, সে-ই আমার সন্তানকে হত্যা করল! আমার সন্তানকে না মেরে আমাকে মারত। তার কী এমন দোষ ছিল? শুধু কি আমার ছেলেই তোর (ইলিয়াস) মেয়েকে ভালোবেসেছে? তোর মেয়ে কি ভালোবাসে নাই? যদি তোর মেয়ে ভালো নাই বাসত, তাহলে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন আমার ছেলেকে বিয়ে করল?’

ইউসুফ আলী আরও বলেন, ‘আমার ছেলে আমার একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছে। আমরা যদি জানতাম, সে ময়মনসিংহে যাবে; কোনোদিন যেতে দিতাম না। সৌরভের বিয়ের পর বিভিন্ন সময়ে আমার ছোট ভাই আমাকে নানা হুমকি-ধমকি দিয়েছে। আমি এই হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত সবার ফাঁসি চাই।’

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ সৌরভের মা মাহমুদা আক্তার। তিনিও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ভালোবেসে চাচাতো বোনকে বিয়ে করাই আমার ছেলের কাল হয়েছে। আমরা কোনোদিন ভাবিনি–আপন চাচা তার ভাতিজাকে এভাবে হত্যা করবে! এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে আমার সাজানো সংসার ছিল। ইলিয়াস সবকিছু এলোমেলো করে দিল।’

জানা যায়, ওমর ফারুক সৌরভ ও চাচাতো বোন ইসরাত জাহান ইভার বিয়ে প্রথমে দুই পরিবারের কেউই বিষয়টি মেনে নেয়নি। একপর্যায়ে সৌরভের পরিবার মেনে নিলেও ইভার পরিবার মানেনি। সৌরভকে ডিভোর্স দিতেও চাপ দেয়া হয়। তবে সৌরভ স্ত্রীকে ছাড়া থাকতে নারাজ। উপায় না পেয়ে ইভাকে কানাডা পাঠিয়ে দেয় তার পরিবার। এরপর দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, যেখান থেকে সৌরভের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তার পাশেই রক্তে ভেজা বালিশ, জানালার পর্দা, কাঁথা, স্কচটেপ, গ্লাভসসহ বেশ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। যা বিশ্লেষণ করে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, সৌরভকে হত্যার পর খুনি ধারালো যন্ত্র দিয়ে তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে। লাশের পরিচয় যেন কেউ শনাক্ত করতে না পারে, সে জন্য মাথা বিচ্ছিন্ন করে সেটা আলাদাভাবে গুমের চেষ্টা করা হয়। এ ছাড়া পরিচয় লুকাতে খুনি লাশের দুই হাতের আঙুলের চামড়া তুলে ফেলেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার রাতে ওই তরুণকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় খুনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর