নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাথী দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত সেই কালো রংয়ের মাইক্রো সহ আতাউর
রহমান নামে মামলার এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ নাটোরে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশা এবং তার দুই সহযোগী অপহরণ কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি, চাকু এবং অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবিব রুবেলের নির্বাচনের পোস্টার, হ্যান্ডবিল, ক্যালেন্ডার ও মাইক্রোবাস উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেছে ডিবি পুলিশ।
এই ঘটনায় আতাউর রহমান নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আতাউর সিংড়া উপজেলার চকপুর গ্রামের রবিউল্লার ছেলে। গতকাল ২০ এপ্রিল শনিবার সিংড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্য মতে আতাউর রহমানের বাড়ি চাঁদপুর থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত কালো রঙের মাইক্রোবাস উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় নিজ কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, জব্দ করা মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চ- ৫৬-৫৩৯৫) প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের নির্বাচনী প্রচারপত্র, পোস্টার, লিফলেট পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওই প্রার্থীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক সুজন সাহার ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্রও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, মাইক্রোবাসটি তল্লাশি করে দুটি চায়না চাপাতি, একটি টিপ চাকু, একটি বর্মিজ কাটার, দুটি রামদা, দুটি স্টিলের পাইপ, দুটি স্ট্যা¤প ও
একটি দেশি চাপাতি জব্দ করা হয়েছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় চকপুরের একটি বাড়ি থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটি একটি ঘরের মধ্যে লাকড়ি দিয়ে ঢেকে রাখা ছিল। বাড়িটি লুৎফুল হাবীবের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের একজন ব্যবস্থাপকের বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার আতাউরকে মাইক্রোবাসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ২০ এপ্রিল শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাদাত হোসেন এই তথ্য জানান। তিনি জানান, গত ১৬ এপ্রিল জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে আসা
দেলোয়ার হোসেন পাশা এবং তার দুই সহযোগীকে মাইক্রোবাসে করে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপরে দেলোয়ার হোসেন পাশাকে মারধরম করে তার গ্রামের বাড়ি সিংড়া উপজেলার পার সাঐল গ্রামে ফেলে রেখে যায়।
এই ঘটনায় বাদী হয়ে দেলোয়ার হোসেনের বড় ভাই মজিবর রহমান ১৭ এপ্রিল নাটোর সদর থানায় অজ্ঞাত ২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেন। মামলা পর
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ১৭ এপ্রিল ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে সারোয়ার হোসেন সুমন এবং নাজমুল হক বাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। এদিকে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীবকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। অন্যথায় তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের কেউ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন না। এদিকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত কালো রঙের
হায়েস মাইক্রোবাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অপহরণের ঘটনায় জড়িত দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান শেখ ওই প্রার্থীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে দেন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বিকেলে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওহিদুর রহমান শেখ জানান, আমরা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কথাটা লুৎফুল হাবীবকে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি (লুৎফুল হাবীব) সেটা না মানলে দল কী করবে, তা-ও জানিয়ে দিয়েছি। তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কী করা যায়, ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক ও সিংড়া পৌরসভার মেয়র
জান্নাতুল ফেরদৌস জানান , বর্ধিত সভায় অপহরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ রেজল্যুশন লেখার পর আগামীকাল রোববার সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো হবে।
স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ সন্ধ্যায় সিংড়া পৌর ভবনে উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুসরণ করার ব্যাপারে মতামত দেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে সভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওহিদুর রহমান শেখ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে ফোন করে তাঁর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। সভার সিদ্ধান্ত না মানলে উপজেলা আওয়ামী লীগ তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবে না বলেও জানিয়ে দেন।