স্বাস্থ্য ডেক্সঃ
শীতে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। যে কারণে জীবাণুরাও আক্রান্ত করার সুযোগ পায় বেশি। বিশেষ করে শিশুরা এর শিকার হয়। এডিনয়েডের প্রদাহ ছাড়াও টনসিলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নানা জটিলতায় ভোগে তারা। তাই এ সময় ঘন ঘন অসুস্থতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।সাত দিনের মধ্যে টনসিল বা গলাব্যথা না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। টনসিলের একধরনের ইনফেকশন হলো টনসিলাইটিস। শরীরে কিছু লিম্ফনোডস থাকে যেগুলো ইমিউনোগ্লোবিউলিন নিঃসরণ করে শরীরকে রক্ষা করে। টনসিল তেমনই একটি লিম্ফনোড, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ। দুই-ছয় বছর পর্যন্ত এটি নানা ইনফেকশন থেকে নাক, গলা, কানকে রক্ষা করে।অনেকের ধারণা, টনসিল এমন এক বস্তু, যা প্রত্যেকের গলায় থাকে, ঠান্ডা পানি খেলে বা ঠান্ডা খাবার খেলে কিংবা ঠান্ডা বাতাসে সমস্যা তৈরি করে। এটি অপারেশন করে ফেলে দিতে পারলেই মুক্তি! আসলে এটি ঠিক নয়। টনসিলাইটিস একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস দায়ী। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্যও টনসিলাইটিস হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রোপ্টোকক্কাসের কারণে এ সমস্যা হয়। অন্যান্য ব্যাকটেরিয়ার কারণেও হতে পারে।টনসিলে প্রচুর শ্বেত রক্তকণিকা থাকে, যা জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এ কাজে বাধা দেখা দিলেই রোগ দেখা দেয়। কিন্তু কখনো কখনো এসব জীবাণুকে ধ্বংস করতে গিয়ে টনসিল গ্রন্থি নিজেই আক্রান্ত হয়। তখন গ্রন্থিটি ফুলে যায়।শিশুরা যখন বাইরে খেলাধুলা করে এবং স্কুলে অনেকের সঙ্গে থাকে তখন টনসিলাইটিস হওয়ার আশঙ্কায় থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি হয় কমন কোল্ডের কারণে। ১৫-২০ ভাগ হয় বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়ার কারণে। ব্যাকটেরিয়ার কারণে স্ট্রেপ্টো থ্রোট নামক রোগ হয়। এ রোগের লক্ষণকে অবহেলা করা উচিত নয়।
লক্ষণ
প্রথম অবস্থায় জ্বর ও গলাব্যথা দেখা যায়। দুই পাশের টনসিল ফুলে লাল হয়ে যায়। অনেক সময় গলার গ্রন্থি বেড়ে গলনালি বন্ধ হয়ে যায়। ঢোক গিলতে সমস্যা হয়। খাবার গিলতেও কষ্ট হয়। মুখ দিয়ে লালা পড়ে। কাঁপুনিসহ জ্বরও আসতে পারে। ক্রমে টনসিল পাকে ও ফেটে যায়। বারবার টনসিল প্রদাহ রোগের আক্রমণের শিকার হলে পীড়া পুরাতন আকার ধারণ করে। এতে টনসিলের গঠনের স্থায়ী বৃদ্ধি ঘটে। পুরাতন পীড়ায় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। নাক বন্ধ করে রোগীকে শ্বাস নিতে হয়। এ টনসিল দেখতে একটা বড় সুপারির মতো মনে হয়। মনের অবস্থার পরিবর্তন, শ্রবণশক্তি হ্রাস, কানে তালা লাগা এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
জটিলতা
n শ্বাসনালিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবন্ধকতা, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
n খেতে বা গিলতে সমস্যা হওয়া।
n কথাবার্তায় জড়তা বা অস্বাভাবিকতা।
n ক্রনিক কর্ণমূল প্রদাহ, হার্টের কপাটিকার রোগসহ ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া স্কারলেট ফিভার, বাতজ্বর এবং বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগও হতে পারে।
পরীক্ষা
n কফ কালচার করলে সংক্রমণকারী জীবাণু সম্পর্কে জানা যায়।
n CBC-তে শ্বেত রক্তকণিকাসহ রক্তের অন্যান্য উপাদান ও সংক্রমণ সম্পর্কে জানা যায়।
n সরাসরি দেখেও (ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন) অনেক সময় টনসিলাইটিস শনাক্ত করা যায়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি